বাস্তবতা আসলে কি?  

মাহিন আহমেদ

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৭, ২০২০

 
আব্বা আম্মা ছোটবেলায় কখনও কখনও বকা দিতে যে বাবা, বড় হলে বুঝতে পারবা বাস্তবতা কত কঠিন। কিন্তু সেই আমলে স্বৈরাচারের দৈনিক রেপ ছিলনা। নাকে মুখে রক্ত উঠায়ে ভ্যাট দিতে হত না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে লিগালাইজড ছিনতাই করার জন্য পুলিশ দাঁড়ায়ে থাকতো না। হাজার হাজার টাকার বিল দিতে হতনা। জোর করে কেউ মুখোশ পরতে বাধ্য করত না। যাহোক, বড় হয়ে আমরাও বুঝতে শিখলাম বাস্তবতা কি জিনিস। আগের দিনে বাস্তবতা ছিল ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ার। এখনকার দিনে বাস্তবতা হল বিসিএস ক্যাডার, পুলিশের এসাই, মিলিটারি অফিসার, ব্যাংক লোন ডিফল্টার ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, বিশেষ দলের বিশেষ ব্যক্তি, এইসব। তো আমরা বড় হয়ে বুঝতে পারলাম যে স্ট্যাটাস, বিলাসী লাইফস্টাইল, বিদেশে সেটল, উচ্চ পদ, অঢেল টাকা, এইসবই হল "বাস্তবতা"। অর্থাৎ অর্থই সকল অর্থের মূল। যার জীবনে টাকা আছে, তার জীবনের অর্থ আছে। আকাশে লুকায়ে থাকা নকল ঈশ্বর এবং মানিব্যাগে আসল ঈশ্বর, এই দুই ঈশ্বরের যে উপাসনা করে, সেই জানে বাস্তবতা কি জিনিষ। 
 
ক্যাপিটালিস্ট আমেরিকার কাছে বাস্তবতা হল জব ক্রিয়েশন। যে যত বড় ব্যবসা করে বেশি বেশি চাকরি তৈরি করবে, তার তত দাম। আমেরিকায় মিনিমাম ওয়েজ আছে। অর্থাৎ কাউকে চাকরি দিলে তাকে একটা মিনিমাম বেতন দিতে হবে যাতে সে চলতে পারে। দেখা যায় এই টাকায় পোষাতে না পেরে অনেকেই ওখানে ২/৩টা চাকরি করে। আবার ইমিগ্র্যান্ট যারা বিশেষত ইলিগাল, এদেরকে অনেকে কম বেতনে কাজ দেয়। এতে দুই পক্ষেরই লাভ হয়। যাদের আমেরিকান ডিগ্রি নাই তারা অড জব করে। এতে সংসার চলে যায়। অনেকে নিজের ব্যবসা দাঁড় করায়। এটাও সম্ভব। পরিশ্রমী মানুষ আমেরিকায় ভাল থাকে। ওখানকার পুলিশ খুব পাওয়ারফুল। 
 
তো বাংলাদেশে আছে এক স্বৈরাচারী জান্তা। এরা দেশের মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। দুইচারটা রাস্তাঘাট বানানোর নামে এরা বিগ প্রজেক্টের ধান্দা করে। একটা বিগ প্রজেক্ট মানেই নিজের পকেটে হাজার হাজার কোটি টাকা। আপনি একটু শক্তিশালী, লম্বা চওড়া, সাহসী, আর চোয়ালের জোর থাকলে আপনার রাস্তা পরিষ্কার। একটু চাপাবাজি, একটু তেল মারা, কার্ডগুলা ঠিকমত খেলা, জায়গামত নেটওয়ার্ক করতে পারলে আপনাকে আর পায় কে?
 
আবার ধরেন বিম্পি, জামাতের মত কিছু পরাজিত দল আছে যারা সুযোগের সন্ধানে আছে। গদিতে একবার উঠলেই দেখে নিবে কত ধানে কত চাল। এই দেশের মানুষ দিব্যি ৮০০ টাকার ইলিশ, ১০০০ টাকার খাসি, ১৫০ টাকার পেঁয়াজ খায়, কোন টুঁ শব্দ করেনা। এখন আর দেশে দুর্ভিক্ষ হয়না। খাবারের দাম যতই বাড়ে সবার হয়ে যায় কোনভাবে। ধরেন ৬/৭ মাস যাবত সব ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে রেখেছে স্বৈরাচার। কোন ব্যাপার না। কোন আওয়াজ নাই। কোন আন্দোলন নাই। আন্দোলনের পারমিশন নাই। আন্দোলন করতে গেলে পুলিশ এসে পিটাবে আপনাকে। তারপরে মামলা দিবে। এবার দৌড়ান। জমি টমি থাকলে বেচা শুরু করেন। ফেসবুকে কিছু বলবেন? আরে পাগল নাকি? আইসিটি আইন করা হয়েছে কেন? আপনার সুবিধার্থে নাকি? 
 
তো এগুলা হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা। সিনহা হত্যা, আবরার হত্যা, গুলশান আর্টিসান, পিলখানা, বিবস্ত্র করে পিটিয়ে ভিডিও করা, এগুলা আমাদের বাস্তবতা। জাহাঙ্গীর নগরের রেপের সেঞ্চুরি করা ছেলেগুলা এখন কোন মন্ত্রনালয় চালায়? জানেন নাকি আপনারা?
 
আমেরিকার অবস্থা ভাল না। ওই দেশের মানুষ খুব ব্রেইনওয়াশড। ওই দেশ চালায় সেটানিক ডীপ স্টেট কিন্তু এভারেজ মানুষ তাদের টিভি ছাড়া অন্য কিছু বিশ্বাস করেনা। ওদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওদের টিভিকে বলে ফেইক নিউজ, কিন্তু এতে ব্রেইনওয়াশড আমেরিকানরা ট্রাম্পের উপরেই ক্ষেপে। মিডিয়া যে আসলে ওদের ব্রেইনওয়াশ করে রেখেছে সেটা বুঝতে পারেনা। মিডিয়ার ব্রেইনওয়াশ খেয়ে ওরা ট্রাম্পকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। তো ট্রাম্পের পিছনে আছে ওদের হোয়াইট হ্যাট মিলিটারি। এর মানে হল এরা আমেরিকার সেটানিক ডীপ স্টেটের বিরুদ্ধে। পৃথিবীতে কিছু চিজ আছে যারা আড়াল থেকে সবকিছু কন্ট্রোল করে। বাংলাদেশের স্বৈরাচারকে এরাই চালায়। র-সিয়াইএ-এমাই৬ কে এরাই চালায়। হোয়াইট হ্যাটরা এই হিডেন কাবালের বিরুদ্ধে ফাইট দিচ্ছে। আমার মত যারা মেট্রিক্স থেকে আনপ্লাগড তারা আপনাদের সাথে তথ্য শেয়ার করে আমাদের আসল বাস্তবতা আসলে কি সেটা বুঝানোর চেষ্টা করি। এটা হল বাস্তবতার পিছনের বাস্তবতা যা সম্পর্কে আমাদের বাবা মা কিছু জানত না। টাকা কামাইয়ে আর সংসার চালানোয় ব্যস্ত থাকার কারণে কারও গভীরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি যেটা আজকে আমাদের হয়েছে। সাধারণ ব্রেইনওয়াশড মানুষজন আমাদেরকে না বুঝে কনস্পিরেসি থিওরিস্ট বলে গালি দেয়। এতে মাইন্ড করে লাভ নাই। এরা কিছু জানেনা। এরা যে কিছু জানেনা সেটাও এরা জানেনা। কাজেই।
 
পৃথিবীর ব্যাংকিং সিস্টেমটা ১০০% করাপ্ট। এটার মাধ্যমে ডীপ স্টেট আমাদের রক্ত চুষে খায়। হোয়াইট হ্যাটরা এটাকে রিপ্লেস করবে একটা কোয়ান্টাম ফিনানশিয়াল সিস্টেম দিয়ে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একটা আধুনিক টেকনোলজি যার মাধ্যমে ডীপ স্টেটের দুর্নীতি থামানো সম্ভব। কিন্তু সেটা হতে হলে তো আমাদের সে সম্পর্কে কিছু জানতে হবে। কাউকে সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যে অ্যাডমিরাল্টি ম্যারিটাইম ইউসিসি ল দিয়ে এনস্লেভড সেটা তো আমাদের বুঝতে হবে নাকি? এর বদলে কমন ল, সিভিল ল, ব্যবহার করতে হবে। নেসারা-জেসারা সম্পর্কে জানতে হবে যেগুলা আরও উন্নত মানের সিস্টেম যেখানে কোন দুর্নীতি থাকবেনা। আমাদের ক্রমাগত এইসব নতুন তথ্য জানতে এবং জানাতে হবে। এভাবে সবাই মিলে কাজ করলে একটা নতুন উপায় বের হবে। 
 
এটা হল আমাদের আসল বাস্তবতা।
 
কিন্তু আপনারা কি করছেন? একেবারে কিছুই না। আপনারা রেপ নিয়ে চেঁচান। যেদিন মিডিয়া যে ব্যাড নিউজ দেয় সেটা নিয়ে লাফান। ফেসবুকে এক শিয়াল হাম্বা করলে সব শিয়াল হাম্বা করে। এ কি ধরনের বাস্তবতা? আপনাদের একজনের কোন পোস্ট দেখেও মনে হয়না যে আপনারা কেউ মগজ ধোলাই থেকে বের হতে পেরেছেন। সেটা পেরে থাকলে এখন কি করছেন? একজন ব্রেইনওয়াশড মোরন আর আপনার মধ্যে তফাৎ কোন জায়গায়? কাউকে কাউকে দেখি অন্যদের খুব পঁচানি দিতে -- কিন্তু আপনি নিজে কি করছেন? অন্যদের পঁচানি দিয়ে কি হবে? আপনাকে ঠিক করবে কে? নিজের সামনে একটা আয়না ধরেন। 
 
আমাদের বাস্তবতা হল যে আপনি একজন মাইন্ডফাকড অকাট মূর্খ ব্যক্তি যে মেইনস্ট্রিমের মগজধোলাইয়ের বাইরে একটা বাক্যও বলতে পারবেন না। টেস্ট করে দেখেন এটা সত্যি কিনা। কাকে আপনি চেনেন যে মগজ ধোলাইত নয়? সেটা আপনি বুঝবেন কিভাবে? আপনি তো কিছুই জানেন না যে কে মগজ ধোলাইত আর কে নয়। কিসের ভিত্তিতে সেটা মাপবেন? এটা বুঝতে হলে আগে তো আপনার নিজের মগজ ধোলাই কাটাতে হবে। সেটা কবে করলেন? কি দিয়ে করলেন? করে কি উদ্ধার করলেন? কি ডিফারেন্স মেক করছেন? কার কি উপকার হচ্ছে আপনাকে দিয়ে?
 
আমাদের পায়ের নিচে অজস্র সভ্যতা আছে, টানেল সিস্টেম আছে সারা পৃথিবীব্যাপী। এগুলা সম্পর্কে জানুন। স্পেসে অনেক সভ্যতা আছে। সেগুলা সম্পর্কে জানুন। মানুষকে কারা সৃষ্টি করেছে, সে সম্পর্কে জানুন। মানুষ ছাড়া আর কি কি ইন্টেলিজেন্ট স্পিসি আছে পৃথিবীতে, তাদের সম্পর্কে জানুন। পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান আপনার কোরান শরীফের মধ্যে নাই। পাগল না হলে কেউ এই কথা বলবে না। এটা বুঝুন। আপনি বাস্তবতা বলতে যা বোঝেন তা আদৌ বাস্তবতা নয় এটা বুঝুন। পারবেন? নাকি আগেই সব বুঝে বসে আছেন? যতসব কনস্পিরেসি থিওরি! পুরাণ পাগলে ভাত পায়না নতুন পাগলের আমদানি, নাকি?